শ্বাশত রিয়াদ, চরফ্যাশন (ভোলা)
মেঘমুক্ত আকাশে দ্বিপ্রহের সূর্যের মতই আবার ও কৃষকের ভাগ্যাকাশে ‘বাম্পার’ শব্দটি প্রতিফলিত হয়েছে। ঘর্মাক্ত শরীরের পোড় খাওয়া কপালে এবারের বাম্পার ফলন যেন কৃষকের পুষ্পকাননে প্রস্ফুটিত গোলাপ। গোলাপের অজস্র পাপড়ির মতো এবার গ্রীষ্মকালীন রবিশস্য তরমুজ, শসা, ডাল, মরিচ এমনকি বোরো ফসল সুবাস ছড়িয়েছে কৃষকের কাননে।
মহামারীর মতো ছোঁয়াচে না হলেও হৃদয় স্পর্শী করার মতো সাফল্য এসেছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে। বিশেষত চরকলমি, নজরুল নগর, মুজিব নগর, সিকদারের চর, চর মন্তাজ ও চর মানিকা তৎসংলগ্ন এলাকায় ছোট ছোট চর ও নদী অববাহিকায় তরমুজের ফলন হয়েছে অভাবনীয়। যেন কোন জাদুর ছোঁয়ায় সোনার কাঠি – রূপার কাঠি কৃষকের দোরগোড়ায়।
বিগত কয়েক বছরে অতিবৃষ্টি আবহাওয়ার বৈরীভাব বীজ সার ও কীটনাশকের অপর্যাপ্ততায় কৃষকের সাফল্যে জোছনার বদলে অভিমানে ঢেকে গেছিল কালো মেঘে। কিন্তু এবার কৃষি ও কৃষকের রুপান্তরের আলোতে সাফল্য এসেছে। অনুকূল আবহাওয়া, দিন- রাত হার না মানা খাটুনি কৃষি যন্ত্রপাতি, সার বীজ কীটনাশকের পর্যাপ্ত যোগান যোগানে সাফল্য এবার হাতের মুঠোয়।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্য সংকটে কৃষকের এই সাফল্য আমাদের আশাবাদী করেছে। বিশেষত বেকার শিক্ষিত তরুন যুবক – যুবতির মাঝে কৃষি নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন ব্লক সুপারভাইজারের তথ্যমতে এবার চরফ্যাশন উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে রবি শস্যের চাষাবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। বিশেষত তরমুজের ফলন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রায় তিনশত কোটি টাকার ফলন হয়েছে বলে স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন। ফলে অর্থনৈতিক সুবাস বইছে। মহাজনের করা সুদে ঋণ এনজিও কর্তৃক কিস্তির বোঝা অভাব বিগতদিনে কৃষকদের দিশেহারা করেছে। তেমনিভাবে এবারের সাফল্য তাদের ঘরে কৃষক – কৃষাণীর মাঝে নবান্নের বার্তা নিয়ে এসেছে।
কৃষিতে এই সাফল্যে হাসনায়েত হোসেন সৈকত বলেন,” যখন করোনাভাইরাসের অতিমহামারিতে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সংকটে তখন আমাদের দক্ষিনাঞ্চলের কৃষকের এই সাফল্যে আমিও খুব আশাবাদী। ” শিক্ষিত বেকার যুবকদের অতি সোনার হরিণ চাকুর পিছনে না ঘুরে কৃষিতে মনোনিবেশর পরামর্শ দিয়েছেন এই প্রবাসী।
দক্ষিণ মঙ্গলের মহিউদ্দিন ভুট্টো বলেন, ” এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর অশেষ রহমতে কৃষিতে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
মায়াপাতা গ্রামের আল আমিন মৃধা বলেন, তিনি এবার পাঁচ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় তরমুজের ফলন পর্যাপ্ত হয়েছে। খরচবাদে তার পাঁচ লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে বলে এই তরুণ কৃষক মনে করেন।
পল্লী – প্রকৃতি মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম সন্তান কৃষক। সেবক, সাধক, কল্যাণই তাদের ব্রত। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কৃষিতে কৃষিতে আমাদের তাৎপর্যময় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে ও এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
Leave a Reply