আব্দুল্লাহ আল হাসিব, বরিশাল: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি যাত্রী। তাদের ঝালকাঠি ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীর গাবখান ধানসিঁড়ি এলাকায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চটিতে আগুন লাগে। জানা গেছে, লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিল। এতে প্রায় হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। পরে পার্শ্ববর্তী দিয়াকুল এলাকায় ভেড়ানো হয়।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর দপদপিয়া এলাকায় পৌঁছালে লঞ্চটিতে আগুন লাগে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে লঞ্চটি সদর উপজেলার দিয়াকুল এলাকায় গিয়ে নদীর তীরে নোঙর করে।
খবর পেয়ে ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। দগ্ধ যাত্রীদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছেন।
এদিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালটিতে দুই বছর আগে বার্ন ইউনিট উদ্বোধন হলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে। ফলে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারি ইউনিটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা থেকে চারজন প্রশিক্ষিত বার্ন চিকিৎসক বরিশাল যাচ্ছেন। বিকেলে ফ্লাইটযোগে তারা রওনা হবেন।
এদিকে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আহতদের ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রাষ্ট্রীয় খরচে চিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারকে নৌ-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানায় সংগঠনটি।
লঞ্চটি বর্তমানে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউড়িসাইক্লোন শেল্টারের পাশে (বিষখালী নদীর তীরে) নোঙর করা হয়েছে।
এ ঘটনার তদন্তে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তোফায়েল আহমেদকে আহ্বায়ক এবং উপসচিব আমিনুর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এই কমিটিতে বিআইডব্লিউটিএ, নৌপরিবহন অধদপ্তর, নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসের একজন করে প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
Leave a Reply