সদরঘাট প্রতিনিধি
ভোলা-মনপুরা-হাতিয়া-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ তাসরিফ-২ ও তাসরিফ-৪ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ৪৩ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক পরীক্ষার্থী।
জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে ফেয়ারী শিপিং লাইন্স লিমিটেডের তাসরিফ-২ নামের লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসে। ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন, হাকিম উদ্দিন, দৌলতখান ও সদরের ইলিশা বিশ্ব রোড ঘাটে ভিড়ে ঢাকাগামী যাত্রী তুলে সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ভোলা ত্যাগ করে। ওই লঞ্চে ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলার মনপুরা, তজুমদ্দিন,হাকিমউদ্দিন, দৌলতখান ও ভোলা সদরের প্রায় দুই শতাধিক পরীক্ষার্থী ছিলেন।
কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ সদরঘাটে আসতে পারেনি। শুক্রবার ভোর ৪ টায় সদরঘাটে লঞ্চ পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা পৌঁছায় সকাল ১০ টায়। এতে দুর্ভোগে পরে পরীক্ষার্থীরা। দেরিতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছালে কেন্দ্রে প্রবেশ নিষেধ করা হয় তাদের।
মনপুরা উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়নের পরীক্ষার্থী মো. হাবিব বলেন, ‘হাতিয়া থেকে ছেড়ে আসা তাসরিফ-২ লঞ্চে আমি মনপুরা থেকে উঠি। লঞ্চটি পালাক্রমে তজুমউদ্দিন, হাকিম উদ্দিন, দৌলতখান, ও ভোলা সদরের ইলিশা ও বরিশালের কালিগঞ্জ থেকে যাত্রী তুলে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। কিন্তু রাত ১০টার দিকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ ঘাট ত্যাগ করলে লঞ্চটি আবার ঘুরিয়ে রাত ১২ টায় ভোলার হাকিম উদ্দিন লঞ্চঘাটে চলে আসে। লঞ্চ ঘুড়িয়ে আনার কারণ জানতে লঞ্চ সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাদের বলেন, তাসরিফ-৪ লঞ্চ চরে আটকা আছে। ওই লঞ্চে কিছু রোগী আছে তাদের নেয়ার জন্য ঘুড়িয়ে আনা হয়েছে।’
রাত ১২ টায় হাকিমউদ্দিন এলাকায় তাসরিফ-৪ লঞ্চ থেকে তাসরিফ-২ লঞ্চে আশা মো. আরিফুর রহমান ও রাজিব বলেন, ‘লঞ্চ চরে আটকা পড়ার পরে পরীক্ষার্থীরা তাসরিফ-৪ লঞ্চ স্টাফদের পরীক্ষার বিষয়টি জানানো হয়। তারা জানায় চিন্তার কিছু নেই লঞ্চ ভোর ৬ টার মধ্যে ঘাটে পৌঁছাবে। এই প্রতিশ্রুতিতে আমরা শান্ত থাকি। কিন্তু সকাল ১০ টায় ঘাটে পোঁছালে আমরা ঢাকার রাস্তায় জ্যামের সম্মুখীন হই। এতে করে পরীক্ষার সময় অতিক্রম করায় আমাদের হলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।’
ভোলা সদর উপজেলার শাহানাজ খানমে ও দৌলতখান উপজেলার মো. নাইম বলেন, ‘দুই লঞ্চের যাত্রী এক লঞ্চে উঠায় লঞ্চে জাগার স্বল্পতা দেখা দেয়। পরে আমরা লঞ্চের মাস্টারের রুমে অবস্থান নেই। সময় বিলম্ব হওয়ায় লঞ্চ দ্রুত চালানোর কথা থাকলেও রাতে মাঝ নদীতে লঞ্চ বন্ধ করে রাখেন তারা। লঞ্চে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য প্রায় দুই শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘সকালে পরীক্ষা থাকায় আমরা তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশ্য চলে যাই। আমরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে দুপুরের দিকে তাসরিফ-২ লঞ্চে এসে লঞ্চের স্টাফ ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বললে তারা, বিষয়টি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানান এবং আমাদের বিনা খরচে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেন।’
এদিকে তাসরিফ-২ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. জামাল হোসেন জানান, ‘বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকায় আমাদের জাহাজ তাসরিফ-২ পৌঁছালে আমরা খবর পাই হাকিম উদ্দিন ঘাটে আমাদের আরেকটি লঞ্চ তাসরিফ-৪ চরে আটকে যায়। ওই লঞ্চে অনেক বিসিএস পরীক্ষার্থী ও কয়েকজন রোগী ছিলেন। লঞ্চটি সমস্যা হওয়ায় আমরা পুনরায় লঞ্চ ঘুরিয়ে হাকিম উদ্দিন ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ভোরে লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নদীতে স্রোতের চাপ ও হাকিম উদ্দিন ঘাটে যাওয়ায় সময় বিলম্ব হয়। তাই প্রতিশ্রুতী দিয়েও নির্দিষ্ট সময়ে ঘাটে পৌঁছাতে পারিনি। আমরা লঞ্চকর্তৃপক্ষ এ বিষয় নিয়ে অনুতপ্ত।
Leave a Reply